হৃদরোগে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার দায় সরকারকে নিতে হবে বলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানতে চেয়েছেন, কেন সে দায় নেবে সরকার?

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরতে আয়োজন করা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় শুক্রবার গভীর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় এনজিওগ্রাম শেষে শনিবার সকালে বিএনপি নেত্রীর হার্টে তিনটি রিং পরানো হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দায় কেন সরকার নেবে? তিনি কি মির্জা ফখরুল সাহেবের আন্দোলনে মুক্ত আছেন এখন? এটা শেখ হাসিনার উদারতা, মানবিকতা। মুক্ত আছেন তিনি। বাসায় থাকার অধিকার দিয়েছেন, চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো বাধা নেই।

‘তাদের এত যদি ইচ্ছা হয়, তাহলে দেশের বাহিরে থেকে চিকিৎসক আনুক। আমরা তো মানা করছি না। আর এ ব্যাপারটা আমি বলতে চাই না, যেহেতু স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় হ্যান্ডেল করছে।’

পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাজেটে যে সুযোগ রাখা হয়েছে তারও সমালোচনা করেছে বিএনপি নেতারা। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ও দেশের একটি চিহ্নিত মহল ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের বক্তব্য যদি সত্য হিসেবে ধরে নিই, তাহলে ৭ শতাংশ করদানের মাধ্যমে যদি কেউ টাকা দেশে নিয়ে আসে তাহলে তো তাদের খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু এখন তারা কেন অভিযোগ করছেন?

‘অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলবেন আর যখন আপনার কথা অনুযায়ী সে টাকা ফেরত আসে তখনও অভিযোগ করবেন, সেটাতো আপনাদের দ্বিচারিতা। তাহলে তো আমাকে বলতে হয়, ফখরুল সাহেব কি ভুলে গিয়েছেন, যখন ক্ষমতায় ছিলেন আপনার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অনৈতিকভাবে দুই দফা দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় কালো টাকা সাদা করেছেন। কর অফিসে জরিমানা হিসেবে ৩৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষে জানে, কারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে। পাচারকারী হিসেবে আপনাদের রেকর্ড বিশ্বরেকর্ড।’

আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বেগম জিয়ার দুই পুত্র দুর্নীতির টাকা সিঙ্গাপুর আর আমেরিকায় পাচার করেছে। এই অর্থ এফবিআই তদন্ত করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। সিঙ্গাপুর-আমেরিকায় অর্থপাচার করে বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেছেন। ‘পরে সরকার যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেশে ফেরত আনতে পেরেছে, বাকি টাকা কোথায়, কীভাবে ফেরত দেবেন ফখরুল সাহেব সে প্রশ্ন করছি।’

বাজেটে সুযোগ রাখায় পাচারকারীরা উৎসাহিত হবে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা সেভাবে দেখলে হবে না। দেশের অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে এ রকমের সুযোগ দেয়া হয়। আমরা সেটা দিচ্ছি, আমরা দেখি। একটা সুযোগ আমরা দিচ্ছি, যদি এর সুফল না আসে তাহলে সে সুযোগ আমরা রাখব না। ‘এ বাজেটে একটা সুযোগ আমরা রাখছি, সে সম্ভাবনাকে সামনে রেখে।’

এ সময় বিএনপির সমালোচনা করে কাদের বলেন, ‘দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য চলতি বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন পর্যায়ের সর্বমোট ৯৯ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বিএনপি জামায়াত আমলে ২০০৬-০৭ অর্থ বছরের মোট বাজেট ছিল ৬৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকার।

‘অর্থাৎ এই আমলের শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বিএনপি, জামায়াতের মোট বাজেটের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি।’